স্বদেশ ডেস্ক:
ইরান ও আজারবাইজানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকায় যেকোনো মুহূর্তে তাদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যকার বৈরিতা নতুন করে বেড়ে সেখানেও সঙ্ঘাতের সূচনা ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
গত জানুয়ারি এক বন্দুকধারী তেহরানে আজারবাইজানের দূতাবাসে হামলা চালিয়ে একজনকে হত্য এবং দুজনকে আহত করলে বাকু সেটি বন্ধ করে দেয়। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট এই হামলার জন্য সরাসরি ইরানকে দায়ী করেন।
এর কিছু সময় পর মার্চের শেষ দিকে ইসরাইলে দূতাবাস চালু করে আজারবাইজান। এতে ইরানের সাথে তাদের উত্তেজনা আরো বাড়ে। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একথাও বলেন যে তিনি ও তার আজারবাইজানি প্রতিপক্ষ ‘ইরানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট খুলতে সম্মত হয়েছে।’ এপ্রিলের প্রথম দিকে ইরানের চার কূটনীতিককে বহিষ্কার করে আজারবাইজান। কারণ হিসেবে ইরানের ‘প্ররোচনামূলক কর্মকাণ্ড’ এবং স্থানীয়দের গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করার কথা জানায়।
চলতি সপ্তাহে ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইলি কোহেন তুর্কমেনিস্তান যাওয়ার পথে আজারবাইজান সফর করে সেখানে ইসরাইলের প্রথম দূতাবাস উদ্বোধন করেন। দূতাবাসটি ইরানি সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
কূটনৈতিক উত্তেজনা ছাড়াও দক্ষিণ ককেশাসে আজারবাইজানের কার্যক্রম নিয়েও ইরান উদ্বিগ্ন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর-নভেম্বরের নাগার্নো-কারাবাঘ যুদ্ধে আর্মেনিয়ার কাছ থেকে আজারবাইজান বিরোধপূর্ণ এলাকার বিশাল অঞ্চল দখল করে। এতেও ইরান উদ্বিগ্ন হয়।
এদিকে ইউক্রেনে হামলার পর ওই অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাবও হ্রাস পেয়েছে। আবার আজারবাইজানের ঘনিষ্ঠ মিত্র তুরস্কের প্রভাব বেশ বেড়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে গত অক্টোবরে আজারবাইজান সীমান্তে আরেক দফা বিশাল সামরিক মহড়া চালায় ইরান। আর ৯ এপ্রিল আর্মেনিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের সেক্রেটারিকে স্বাগত জানিয়ে ইরান আবারো জানায়, তারা দক্ষিণ ককেশাসে ‘যেকোনো ধরনের ভৌগোলিক পরিবর্তনের’ বিরুদ্ধে।
ইসরাইলের আজারবাইজানি ভূখণ্ড ব্যবহারে বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছে ইরান।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নেয়ার ইস্ট পলিসির অ্যাসোসিয়েট ফেলো ফারজিন নাদিমি মনে করেন, আজারবাইজানের কার্যকলাপে খুবই ক্ষুব্ধ ইরান। তারা আজারবাইজানের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ চালাতে পারে।
তিনি বলেন, ইরান আর্মেনিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া জাঙ্গেজুর করিডোর উন্মুক্ত রাখতে চায়। আজারবাইজান যদি সেদিকে অগ্রসর হতে চায়, তবে ইরান সম্ভবত আর্মেনিয়া এবং আর্মেনিা-আজারবাইজান সীমান্তে সৈন্য ও ভারী সরঞ্জাম পাঠাবে।
ইরানের তুলনায় আজারবাইজানের সামরিক শক্তি অনেক পিছিয়ে থাকলেও তারা ইসরাইল ও তুরস্কের কাছ থেকে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করছে। বিশেষ করে তুরস্কের বাইরাক্তার টিবি২ সামরিক ড্রোন, ইসরাইলি ব্যালাস্টিক ও জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করে নিজেদের শক্তিশালী করে তুলেছে।
সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর